দৈনিক অতিরিক্ত লবণ গ্রহণের ফলে দেশে উক্ত রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক ও কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্করা প্রতিদিন গড়ে ৯ গ্রাম লবণ গ্রহণ করছেন, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মাত্রার (৫ গ্রাম) চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। এর ফলে প্রতি বছর দেশে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করছে বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে ‘বিশ্ব লবণ সচেতনতা সপ্তাহ-২০২৫’ উপলক্ষে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ-এর সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার আবদুল আউয়াল রিজাতী'র সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগগুপ্ত ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী। মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইনস্টিটিউটের লবণ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সমন্বয়ক ডা. আহমাদ খাইনুল আবরার।
সভায় বলা হয়, উচ্চমাত্রায় লবণ গ্রহণের একটি বড় উৎস হলো প্রক্রিয়াজাত খাবার। এ ধরনের খাবারে লবণের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। এই অতিরিক্ত লবণ নীরব ঘাতকের মতো দেশে হৃদরোগসহ অন্যান্য অসংক্রামক রোগের মহামারি সৃষ্টি করছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে অবিলম্বে একটি সমন্বিত জাতীয় লবণ গ্রহণ হ্রাস কৌশল গ্রহণ করা এবং খাদ্যের মোড়কের সামনে ‘ফ্রন্ট অফ প্যাক লেবেলিং’ বাধ্যতামূলক প্রয়োজন। খাদ্য মোড়কের সামনে সহজবোধ্যভাবে দেওয়া ফ্রন্ট অফ প্যাক লেবেলের মাধ্যমে ভোক্তারা সহজেই লবণ, চিনি ও চর্বির মত স্বাস্থ্যহানিকর উপাদানের পরিমাণ সম্পর্কে সচেতন হয়ে স্বাস্থ্যকর পণ্য বেছে নিতে সক্ষম হবেন।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, লবণ শুধু স্বাদের উপাদান নয়, অতিরিক্ত গ্রহণ করলে এটি হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি রোগসহ অসংক্রামক রোগের বড় ঝুঁকি তৈরি করে। তিনি জাতীয় পাঠ্যক্রমে লবণের ক্ষতিকর প্রভাব অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান; যাতে শিশুদের মধ্যে শুরু থেকেই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে ওঠে।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান মুস্তাক হাসান মো. ইফতেখার বলেন, অধিকাংশ প্রক্রিয়াজাত খাবারে অতিরিক্ত লবণ থাকে, কিন্তু বোধগম্য লেবেলিং না থাকার কারণে জনগণ তা বুঝে উঠতে পারে না। তিনি ফ্রন্ট-অফ-প্যাক লেবেলিং ব্যবস্থা চালুর পাশাপাশি মোড়কে পুষ্টি উপাদানসমূহের সঠিক কর্তৃপক্ষের নিয়মিত নজরদারির প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক সৈয়দ জাকির হোসেন বলেন, অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে সরকার বদ্ধ পরিকর। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত কার্য পরিকল্পনা রয়েছে এবং সে অনুযায়ী কাজ করে চলছে। সম্প্রতি অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি উদ্যোগে জাতীয় লবণ গ্রহণ হ্রাস কৌশল প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে উল্লেখ করে তিনি দ্রুত এটি বাস্তবায়ন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শোয়েব বলেন, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের মোড়কিকরণ আইন অনুযায়ী মোড়কে লবণ, চিনি ও চর্বির পরিমাণ উল্লেখ বাধ্যতামূলক হলেও অনেক কোম্পানি তা করে না, অথবা এমনভাবে উল্লেখ করে যা ভোক্তারা পড়তে পারেন না। জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি মোড়কিকরণ আইন সংশোধন করে সহজবোধ্য ফ্রন্ট-অফ-প্যাক লেবেলিং ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শিব্বির আহমেদ ওসমানী প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, জনস্বাস্থ্য রক্ষায় খাদ্যভ্যাস পরিবর্তনের বিকল্প নেই। তিনি দেশের জনগণকে এ বিষয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য পরিবেশ তৈরিতে সরকারের সার্বিক প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করেন। জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও দেশের সুস্থ ভবিষ্যত নিশ্চিত করার জন্য তিনি সরকারি বেসরকারি সকলের সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে এ জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিফায়ী বলেন, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন দীর্ঘদিন ধরে লবণ গ্রহণ হ্রাসের জন্য প্রক্রিয়াজাত খাবারে লুকানো লবণ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করে আসছে। জনস্বার্থে সরকারিভাবে প্রক্রিয়াজাত খাবারে সর্বোচ্চ লবণের মাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। সেই জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক প্রচারণা চালানো জরুরি।
উল্লেখ্য, জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১২ থেকে ১৮ মে পর্যন্ত ‘বিশ্ব লবণ সচেতনতা সপ্তাহ’পালিত হয়। এই সচেতনতা সপ্তাহের এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘অতিরিক্ত লবণ বর্জন করি, সুস্থ জীবন পড়ি’।
মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক সাইদুল আরেফিন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এনসিটি বিষয়ক কর্মকর্তা ডা. ফারজানা আক্তার পারভিন, বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটির অসংক্রামক রোগ গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ডা. মো. মাবুল হক খান, জাতীয় পুষ্টিসেবার ডেপুটি প্রোগ্রাম প্রোগ্রাম ম্যানেজার আজমেরী শারমিনসহ, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিরা।
দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার ঘাসুড়িয়া সীমান্তে ধানখেত থেকে একটি ড্রোন উদ্ধার করা হয়েছে। ড্রোনটি পরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এদিকে সীমান্তবাসীরা আতঙ্কে রয়েছেন।
উপজেলার ঘাসুড়িয়া আদিবাসীপাড়ার প্রফুল্ল টপ্প বলেন, ‘বুধবার (১৪ মে) দুপুরের দিকে সীমান্তবর্তী একটি ধানখেতে ধান কাটার কাজ করছিলেন। এ সময় খেতের মাঝখানে একটি কালো রঙের মাকড়সার মতো বস্তু পড়ে থাকতে দেখে সহকর্মীদের জানাই। পরে তারা কাছে এসে বলেন এটি ড্রোন। তারা ড্রোনটি তার বাড়িতে রাখার কথা বলেন। কাজ শেষ করে ড্রোনটি বাড়িতে নিয়ে যান তিনি।’
উপজেলার খট্টামাধবপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোবারক হোসেন বলেন, ‘সীমান্তের ২৮৭/২১ নম্বর সাব সীমানা পিলার সংলগ্ন ঘাসুড়িয়া গ্রামের মিরাজুল ইসলামের জমিতে এককদল শ্রমিক ধান কাটছিলেন। এক পর্যায়ে শ্রমিক প্রফুল্ল টপ্প ড্রোনটি দেখতে পেয়ে সবাইকে জানান।’
‘তারা প্রফুল্ল টপ্পকে তার কাছে ড্রোনটি রাখার কথা বলতে প্রফুল্ল ড্রোনটি বাড়িতে নিয়ে যান। পরে স্থানীয়রা মংলা বিজিবি ক্যাম্পে ও থানায় খবর দিলে তারা ড্রোনটি উদ্ধার করে নিয়ে যান।’
হাকিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘গতকাল বুধবার দুপুরে ঘাসুড়িয়া সীমান্তের ৪০০ গজ বাংলাদেশ অভ্যন্তরে ধানখেতে স্থানীয় শ্রমিক প্রফুল্ল টপ্প পড়ে থাকা একটি ড্রোন ক্যামেরা দেখতে পান। বিষয়টি লোকজনকে জানালে তারা এসে ড্রোন ক্যামেরাটি উদ্ধার করে থানায় খবর দেয়। পরে ওইদিন রাত ১০টার দিকে পুলিশ ড্রোন ক্যামেরাটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। বর্তমানে সেটি থানা হেফাজতে রয়েছে।
দিনাজপুর জেলা পুলিশ সুপার মো. মারুফাত হুসাইন বলেন, ‘ঘাসুড়িয়া সীমান্তের একটি ধানখেত থেকে উদ্ধার হওয়া ড্রোন ক্যামেরাটি ভারত থেকে উড়ে আসা বলে তিনি প্রাথমিক ভাবে ধারনা করছেন। ড্রোনটিতে ৫টি ক্যামেরার লেন্স রয়েছে।’
তবে ড্রোনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে এবং আরও তথ্য উৎঘাটনে অনুসন্ধান চলছে বলেও জানান তিনি।
নারায়ণগঞ্জে এক কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি ট্রাইব্যুনাল।
কারাদণ্ড প্রাপ্ত আসামিরা হলেন- শামিম হোসেন,নাজমুল ও জিলকদ।
আজ ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক মো. গোলাম কবির এই রায় ঘোষণা করেন। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানার আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।জরিমানা অনাদায়ে তাদের ছয় মাসের কারাভোগ করতে হবে।
ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি সাজ্জাত হোসেন সবুজ বাসস’কে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী ছাত্রী নারায়ণগঞ্জের একটি কলেজ এলাকায় লেখাপড়া করতেন। আসামি মো. শামিম হোসেন কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকে ওই ছাত্রীকে নিয়মিত প্রেমের প্রস্তাব দিতেন ও নানা ভাবে উত্ত্যক্ত করতেন। প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।
২০১৬ সালের ১৫ মার্চ সকালে প্রাইভেট পড়তে বাড়ি থেকে বের হন ভুক্তভোগী। আনুমানিক সকাল ১১টার দিকে কলেজের মেইন গেটের সামনে পৌঁছালে মো. শামিম, তার সহযোগী মো. নাজমুল, মো. জিলকদ এবং আরও এক অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি তাকে জোরপূর্বক অপহরণ করে। এরপর তারা পালাক্রমে তাকে ধর্ষণ করেন। এ ঘটনায় একই বছরের ১৭ মার্চ ভুক্তভোগী ছাত্রীর মা বাদী হয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ২ জুন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তিনজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। মামলার বিচার চলাকালে আটজন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেন।
চব্বিশের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে আকাঙ্ক্ষার স্ফুরণ ঘটেছে তার একটি সুনির্দিষ্ট রূপ দিতে চায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) ঢাকার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সঙ্গে আলোচনা সভায় এমন মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
তিনি বলেন, ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার বিষয়টিকে আমরা একটি জাতীয় সনদে প্রতিফলিত করতে চাই। ভবিষ্যতে প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দল এই সনদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ভূমিকা পালন করবে৷
ঐকমত্য কমিশনের এই উদ্যোগ বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশাকে ধারণ করে বলে মন্তব্য করেন আলী রীয়াজ। এ সময় কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান, আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
বাংলাদেশের নতুন যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা এদেশের মানুষ এবং রাজনৈতিক শক্তিগুলোর দীর্ঘদিনের সংগ্রামের ফল উল্লেখ করে আলোচনার সূচনায় অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে মানুষের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ যেমন প্রকাশ হয়েছে, তেমনি তাদের প্রত্যাশাকেও প্রকাশ করেছে। বার বার ফ্যাসিবাদের উত্থান হোক; তা দেশের মানুষ চায় না। আমরা এমন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই, যেখানে সবার সমানাধিকার থাকবে, নাগরিকের অধিকার সুনিশ্চিত হবে এবং ভিন্নমতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকবে।
কমিশনের সহ-সভাপতি আরও বলেন, সংস্কার কমিশনগুলো থেকে প্রাপ্ত সুপারিশমালা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে কমিশন। এ দায়িত্ব কেবল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের নয় বরং রাজনৈতিক দলগুলোকেই মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে ভবিষ্যতের পথে অগ্রসর হতে হবে।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজের নেতৃত্বে দলটির সহ-সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতনসহ ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদলের হয়ে আলোচনায় নিখিল দাশ, জনার্দন দত্ত নানটু, প্রকৌশলী শম্পা বসু, ডা. মনীষা চক্রবর্ত্তী, জুলফিকার আলী, আহসান হাবিব বুলবুল, খালেকুজ্জামান লিপন, আবু নাঈম খান বিপ্লব এবং রাহাত আহম্মেদ অংশ নেন।
তীব্র গরমে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বেড়েছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। শিশু, কিশোর, প্রাপ্তবয়স্ক ও বৃদ্ধরাও আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আক্রান্তের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি। এদিকে হাসপাতালে স্যালাইন সংকটের কারণেহাসপাতালের বাহির থেকে খাবার স্যালাইন এবং কলেরা স্যালাইন কিনে আনতে হচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগী ও তার স্বজনরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ১ মে থেকে বুধবার ১৪ মে পর্যন্ত ১৪ দিনে শিশু, কিশোর ও বৃদ্ধসহ ১৬৩ জন রোগী ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। এদের মধ্যে ১৫৮ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। বুধবার সকালে ভর্তি হয়ে ৫ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি।
বুধবার দুপুরে চরফ্যাশন উপজেলা ১০০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার ২১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা থেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি।
শিশু ও মহিলা ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার চরমানিকা ইউনিয়ন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা অহিদ পাতলা পায়খানা হওয়ায় তার ৪ বছর বয়সের বাচ্চাকে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। তিনি জানান, স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিয়েছিলাম, তবে অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য মঙ্গলবার সকালে আমার সন্তানকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করি। এখনও তার ছেলেকে নার্সেরা দেখতে আসেনি।
উপজেলার নীলকমল ইউনিয়ন ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ফারজানা বেগম বলেন, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত তার ১ বছর বয়সী শিশু বাচ্চাকে বুধবার সকালে ভর্তি করেন। এরপর নার্সদের পরামর্শে হাসপাতালের বাহির থেকে স্যালাইন সেট, ক্যানেলা ও কলেরা স্যালাইন এবং খাবার কিনে আনতে হয়েছে। হাসপাতাল থেকে কিছুই দেওয়া হয়নি। সরকারী হাসপাতাল হলেও সরকারী কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না।
রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, তীব্র গরমে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে রোগীদের প্রয়োজনে হাসপাতালে চিকিৎসক তো দূরের কথা, কোনো নার্সকেও তারা ডেকে পান না। হাসপাতাল থেকে তেমন কোনো ওষুধও সরবরাহ করা হয় না।
নার্সরা স্লিপ ধরিয়ে দেন, তা দেখে বাইরে থেকে ওষুধ, স্যালাইন, ক্যানুলাসহ যাবতীয় সামগ্রী কিনে আনতে হচ্ছে। নামেই শুধু সরকারি হাসপাতাল। সবই কিনতে হচ্ছে বাইরে থেকে। হাসপাতালে খাবার স্যালাইন থাকা সত্বেও রোগীদের স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে না।
হাসপাতালের নার্স ইনচার্জ অপরাজিতা জানান, রোগীরা নার্সদের ডাকলে নার্সরা আসেনা এই কথাটা সম্পূন্ন মিথ্যা, রোগীদের সেবায় ১৭ জন নার্স সর্বদা নিয়োজিত রয়েছেন। ডায়রিয়া রোগীদের খাবার স্যালাইন ও কলেরা স্যালাইন হাসপাতালে নাই বলে বাহির থেকে আনার জন্য স্লিপ ধরিয়ে দেন এ বিষয় প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, গত ১৪ দিনে চরফ্যাশন হাসপাতালে ১৬৩ জন ডায়রিয়ায় (কলেরা) আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে স্যালাইন সেট, বাচ্চাদের ক্যানেলা, কলেরা স্যালাইন, এন্টিবায়োটিক, মাইক্র বুলেট, জিং সিরাপ না থাকায় ডায়রিয়া রোগীদের সেবা দানে কিছুটা বিঘ্ন হচ্ছে। তাই রোগীদেরকে বাহির থেকে আনতে বলা হয়। যার ফলে রোগীরা এই অভিযোগগুলো তুলছেন।
চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শোভন কুমার বশাককে একাধিকবার কল দেওয়া হলে তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য জানা যায়নি।
তবে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মাকলুকুর রহমান বলেন, ‘জনবল সংকটের কারণে রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় সীমিত সংখ্যাক কলেরা স্যালাইন সরবরাহ পাওয়ায় কোনো রকমে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে রোগীদের বাহির থেকে স্যালাইন কিনতে হচ্ছে। তিনি জানান, ইতিমধ্যে জেলা সিভিলা সার্জন বরাবর ডায়রিয়া রোগীদের স্যালাইনসহ বিভিন্ন ওধুধের চাহিদা পাঠানো হয়েছে, আশা করি এর দ্রুত সমাধান হবে।’
ভোর হয়নি তখনো। কিন্তু খুলনার বটিয়াঘাটার গ্রামে ব্যস্ততা। কারো হাতে কলস, কারো কাঁধে বালতি। পায়ে ছোপ ছোপ ধুলা, মুখে নীরব প্রার্থনা- দ্রুত একটু পানি মিলবে তো?
এটা কোনো উৎসব নয়, বেঁচে থাকার সম্বল পানির জন্য এক কঠিন প্রতিযোগিতা। সেখানের নিমাই চন্দ্র রায়ের বাড়ির উঠোনটা যেন হয়ে উঠেছিল গ্রামের জীবনধারণের কেন্দ্র। ২০০৪ সালে নিজের খরচে বসানো ডিপ টিউবওয়েল তখন স্বপ্ন দেখাতো- যেন এই পানির ধারা কখনো শুকাবে না।
প্রতিদিন ফজরের আজানের আগেই জড়ো হতেন আশপাশের দুই ডজন পরিবারের মানুষ। নারীর কণ্ঠে প্রার্থনা, শিশুর ক্লান্তি, পুরুষের ব্যস্ত মুখ- সব মিলিয়ে একটা জলের মহাযজ্ঞ।
কিন্তু এ বছরের মার্চে সেই উৎসও যেন নীরব অভিমানে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। যতই চাপ দেওয়া হোক, টিউবওয়েল এখন বোবা। মোটর লাগানো হয়েছে, সেই আশাও নিঃশেষ।
নিমাই বলেন, ‘আগে ১৫-২০ মিনিট চাপ দিলে একটু পানি আসত। এখন তো আর কিছুই আসে না।’ এই শূন্যতা শুধু তার একার নয়। পুরো খুলনা ও পার্শ্ববর্তী জেলাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে পানিশূন্যতার দীর্ঘশ্বাস।
নিমাইয়ের বাড়ির মতো খুলনা ও আশপাশের জেলাগুলোতে এখন লক্ষাধিক হ্যান্ড-পাম্প টিউবওয়েল অচল হয়ে গেছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ডিপিএইচই) তথ্য অনুযায়ী, খুলনা বিভাগে থাকা ১,০১,৩৫০টি হ্যান্ড-পাম্পের ৮৫ শতাংশই এখন পানিশূন্য। খুলনা জেলাতেই রয়েছে ২৮,৪৫২টি, যার অধিকাংশই অকার্যকর।
বটিয়াঘাটায় ৪,১৮৫টি ডিপ টিউবওয়েলের মধ্যে ৮০ শতাংশেই এখন আর পানি ওঠে না। যশোরেও দুই-তৃতীয়াংশ ২৪,৩০৩টি টিউবওয়েল শুকিয়ে গেছে।
ডিপিএইচই এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হ্যান্ড-পাম্প টিউবওয়েল ২৬ ফুটের নিচে পানি থাকলে তা তুলতে পারে না। মোটর পাম্পও ব্যর্থ হয় যদি পানি স্তর ৩০-৩৫ ফুটের নিচে নামে। কেবল সাবমার্সিবল পাম্পই সেই গভীরতা থেকে পানি তুলতে পারে। অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন, জলাশয়ের ঘাটতি এবং অপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনাই এই সংকটের মূল কারণ।
নিমাইয়ের প্রতিবেশী গুরুদাসী বৈরাগী এখন প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা অপেক্ষা করেন কাচারিবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একমাত্র কার্যকর টিউবওয়েলে। ‘২০ লিটারের কলসি ভরতে ১৮০-১৯০ বার চাপ দিতে হয়। প্রতিদিন এখানে ৩০০-৩৫০ জন আসে।’ বলেন তিনি।
তিনি জানান, তার গ্রামে ৫-৬ বছর আগেও অধিকাংশ হ্যান্ড-পাম্প ঠিকঠাক কাজ করত। একই সুরে বটিয়াঘাটা সদর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান পল্লব বিশ্বাস বলেন, ইউনিয়নের ১৮টি গ্রামের মধ্যে ৯০ শতাংশ টিউবওয়েল এখন অচল।
এ ছাড়া গঙ্গারামপুর ইউনিয়নের ঝরভাঙা গ্রামের মিলন কান্তি মণ্ডল ১৯৮৯ সালে একটি ডিপ টিউবওয়েল বসিয়েছিলেন। কয়েক বছর আগে সেটিও নষ্ট হয়ে গেছে। এখন তিনি প্রতিদিন দুই কিলোমিটার হাঁটেন পানির সন্ধানে। আমার গ্রামে ১৮টির মধ্যে মাত্র একটি টিউবওয়েল কাজ করে। প্রায় ৩০০ পরিবার এখন পানির অভাবে দিন কাটাচ্ছে- জানান তিনি।
গঙ্গারামপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আসলাম হালদার বলেন, ইউনিয়নের ২৭টি গ্রামের মধ্যে ২৫টিতেই এখন পানি সংকট চলছে। কিছু এলাকায় এমনকি ১,২০০ ফুট গভীরতায়ও পানি মিলছে না
ডিপিএইচই জানায়, ২০১৫-১৬ সালে খুলনা অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ছিল ১৮ থেকে ২২ ফুট। বর্তমানে তা নেমে গেছে ২৪ থেকে ৩২ ফুটে।
এই সংকট মোকাবেলায় ডিপিএইচই সাবমার্সিবল পাম্প বসানো, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে উৎসাহ দেওয়া ও সেন্ট্রিফিউগাল পাম্প স্থাপন শুরু করেছে।
যশোরে ডিপিএইচই নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহিদ পারভেজ জানান, জেলার সদর, বাঘারপাড়া, ঝিকরগাছা ও শার্শার অনেক জায়গায় পানির স্তর ৩০-৩৫ ফুটের বেশি নিচে নেমে গেছে। ১২,৫০০ সাবমার্সিবল পাম্প বসানো হয়েছে। পাশাপাশি ‘তারা নম্বর ৬’ টিউবওয়েল ও সেন্ট্রিফিউগাল পাম্প বসানো হচ্ছে।
ডিপিএইচইর খুলনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. জামানুর রহমান বলেন, উপকূলীয় খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। তিনি বলেন, ‘গত দুই বছরে আমরা ‘তারা নম্বর ৬’ টিউবওয়েল বসাচ্ছি, যা ৬০-৭০ ফুট গভীর থেকে পানি তুলতে পারে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের হার পুনঃভরণ হারের চেয়ে বেশি হওয়ায় পানির স্তর দিন দিন নিচে নেমে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন, লবণাক্ততার বিস্তার ও বৃষ্টিপাতের ঘাটতিও এই সংকট বাড়াচ্ছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, ‘যতটা পানি উত্তোলন হচ্ছে, ততটা ফিরে আসছে না। তাই টিউবওয়েলগুলো অচল হয়ে পড়েছে।’
দ্বিতীয় দিনের মত এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকা কলম বিরতিতে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজস্ব আদায়কারি প্রতিষ্ঠান বেনাপোল কাস্টমস হাউজে চলছে ‘কলম বিরতি’।
কলম বিরতিতে রাজস্ব আয়রণের কাজ বন্ধ থাকলেও স্বাভাবিক আছে দু'দেশের মধ্যে যাত্রী পারাপার ও আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য। আমদানি রপ্তানিতে তেমন কোন প্রভাব না পড়লেও বিঘ্নিত হচ্ছে রাজস্ব আদায়। বুধবার কলম বিরতি সকাল ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত থাকলেও আজ বৃহস্পতিবার সেটা বাড়িয়ে তিনটা পর্যন্ত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত কলম বিরতির সময় কাস্টমস হাউজে কোন কাজ হচ্ছে না বলে নিশ্চিত করেছেন একজন রাজস্ব কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই রাজস্ব কর্মকর্তা বলেন, “অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আমরা আছি এবং আমাদের পূর্ণাঙ্গ সমর্থন আছে।”
সরেজমিনে দেখা গেছে,কাস্টমস হাউজ খোলা আছে তবে অধিকাংশ টেবিলই খালি।কর্মকর্তারা বাইরে ঘোরাঘুরি করছেন।কিছু কর্মকর্তা আসনে থাকলেও কোন কাজ করছেন না।বেনাপোল পেট্রাপোল বন্দরের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক রয়েছে।কলম বিরতির কারণে নতুন করে কোন পণ্যের আইজিএম ইস্যু করা হচ্ছে না। আগের ইস্যু করা আইজিএমের পণ্য আমদানি-রপ্তানি হচ্ছে।বেলা ৩টা পর্যন্ত কলম বিরতি চলবে। তারপর কাস্টমস হাউজে কাজ শুরু হবে বলে ওই রাজস্ব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বেনাপোল ক্লিয়ারিং এন্ড ফরোয়ার্ডিং এজেন্টস এ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল লতিফ বলেন, কাস্টমসের কলম বিরতির কারণে সকাল ১০টা থেকে হাউজে কোন ফাইলে কাজ হয়নি। তবে ৩টার পর কাজ শুরু হবে বলে কাস্টমস থেকে জানতে পেরেছি। বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইব্রাহিম আহমেদ জানান কাস্টমসের কলম বিরতি চললেও বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে দু দেশের মধ্যে যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক আছে।
বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার বলেন,কাস্টমস হাউসের কলম বিরতি সত্বেও বেনাপোল বন্দর দিয়ে দু'দেশের মধ্যে আমদানি রপ্তানি স্বাভাবিক রয়েছে।বুধবার ভারত থেকে বেনাপোল বন্দর ৩০৬ ট্রাক পণ্য আমদানি হয়েছে।এসময় ভারতে রপ্তানি হয়েছে ১৭৪ ট্রাক পণ্য। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর বারোটা পর্যন্ত ২৫ গাড়ি পণ্য ভারত থেকে আমদানি হয়েছে এবং বাংলাদেশ থেকে ১১ ট্রাক পন্য ভারতের রপ্তানি হয়েছে।
এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ’ এর খসড়া কর্মকর্তাদের মতামত প্রতিফলিত হয়নি। বিভাগ দুটিতে কাস্টমস ও আয়কর ক্যাডারের জন্য পদ সংরক্ষিত না রেখে রাজস্বের কাজে অভিজ্ঞতা নেই এমন কর্মকর্তা পদায়নের সুযোগ রাখা হয়েছে। এতে একদিকে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা কাজে অভিজ্ঞ নয় এমন কর্মকর্তা পদায়নের মাধ্যমে রাজস্ব প্রশাসনের দক্ষতা, গতিশীলতা এবং কার্যকারিতা বিঘ্নিত হবে, অন্যদিকে এনবিআরে কর্মরত দুটি ক্যাডারের কাজের ক্ষেত্র ও পদোন্নতির সুযোগ মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে রাজস্ব খাতকে দুটি পৃথক বিভাগে ভাগ করার প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
চলতি অর্থ বছরের দ্বিতীয় মাস আগস্ট থেকেই ভারতের সঙ্গে কূটনতিক সম্পর্কে টানাপড়েন চলছে বাংলাদেশের। তবে রাজনৈতিক এই সঙ্কটের প্রভাব এখনও দেখা যাচ্ছে না অর্থনীতিতে। বৈরী সম্পর্কের মধ্যেও ভারতে পণ্য রপ্তানি বেড়েই চলছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সোমবার রপ্তানি আয়ের দেশভিত্তিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ভারতে ১৫২ কোটি (১.৫২ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে।
এই অঙ্ক গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫ দশমিক ২৭ শতাংশ বেশি। গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ভারতের বাজারে ১৩১ কোটি ৬৮ লাখ (১.৩১ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল।
এই প্রবৃদ্ধি অপ্রচলিত বা নতুন বাজারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি; একক বাজার হিসাবে সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সমান। অন্য বড় বাজার জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ইতালি ও কানাডার চেয়ে বেশি।
বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক। মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে এই খাত থেকে।
ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থ বছরের দশ মাসে অর্থাৎ জুলাই-এপ্রিল সময়ে ভারতের বাজারে পোশাক রপ্তানি থেকে ৫৬ কোটি ৩৮ লাখ ডলার আয় হয়েছে, যা গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ বেশি।
যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স- এ সব বড় বাজারের চেয়েও ভারতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
এই দশ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৬২৩ কোটি (৬.২৩ বিলিয়ন) ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ। জার্মানি, যুক্তরাজ্য, স্পেন ও কানাডার বাজারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে যথাক্রমে ১০ দশমিক শূন্য দুই, ৩ দশমিক ৪১, ১ দশমিক ৮৬ এবং ১৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ। অপ্রচলিত বাজারের মধ্যে জুলাই-এপ্রিল সময়ে জাপানে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৪১ শতাংশ। অস্ট্রেলিয়ায় বেড়েছে ১ দশমিক শূন্য চার শতাংশ। চীনে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ৮২ শতাংশ।
বিপরীতে রাশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়াসহ অন্য দেশগুলোতে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি কমেছে। রাশিয়ায় কমেছে সবচেয়ে বেশি ১০ দশমিক ৩১ শতাংশ।
ইপিবির এই তথ্যই বলছে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপড়েনের প্রভাব পড়েনি বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যে। ভারত থেকে পণ্য আসা যেমন কমেনি; তেমনি বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি তো কমেইনি, বরং বাড়ছে।
প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ১ হাজার কোটি (১০ বিলিয়ন) ডলারের বেশি। অর্থাৎ বাংলাদেশ যত পণ্য আমদানি করে, তার অনেক কমই রপ্তানি করে থাকে।
অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ভারতে ২১৩ কোটি (২.১৩ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। ভারতে রপ্তানি করে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় বাংলাদেশের সেটাই প্রথম।
তার আগের অর্থ বছরে (২০২১-২২) ভারতে পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ আয় করেছিল ১৯৯ কোটি ১৪ লাখ (১.৯৯ বিলিয়ন) ডলার, যা ছিল ২০২০-২১ অর্থ বছরের চেয়ে ৫৫ দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি।
তবে গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে সেই রপ্তানিতে ভাটা পড়ে; আয় নেমে আসে ১৫৬ কোটি ৯২ লাখ (১.৫৭ বিলিয়ন) ডলারে।
গত বছরের জুলাই মাসে অর্থ বছরের শুরুতেই বাংলাদেশে কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলন শুরু হয়। তা আগস্টের শুরুতেই জনবিস্ফোরণে রূপ নিলে পতন ঘটে শেখ হাসিনার সরকারের। তিনি আশ্রয় নেন ভারতে।
এরপর থেকে ঢাকা-নয়া দিল্লি কূটনৈতিক টানাপড়েন চললেও নভেম্বরে এসে তা তীব্রতা পায় হিন্দু ধর্মীয় নেতা চিন্ময় ব্রহ্মচারী গ্রেপ্তার নিয়ে।
তার জেরে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে এক বিক্ষোভ থেকে বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনে হামলা হয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতারা বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধেরও হুমকি দেন।
এরই মধ্যে গত ৪ এপ্রিল থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে ষষ্ঠ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বহু প্রতীক্ষিত বৈঠক হয়। তবে ওই বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক শীতল হওয়ার তেমন আভাস পাওয়া যায়নি।
এসবের মধ্যেই গত ৯ এপ্রিল ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে ভারতের বন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে বাংলাদেশের পণ্য যাওয়ার ব্যবস্থা প্রত্যাহার করে ভারত সরকার।
এরই মধ্যে কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা শুরু হয়।
পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার জবাবে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের কয়েকটি স্থানে গত ৬ মে প্রথম প্রহরে সামরিক অভিযান চালায় ভারত। জবাবে পাকিস্তানও হামলা চালায় ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে, যাতে যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে।
চার দিন পর ১০ মে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে দুই দেশ। তবে এখনও উত্তেজনা বিরাজ করছে। এই উত্তেজনার প্রভাব বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যেও পড়বে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী নেতারা।
গত বছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ভারতে ১৫১ কোটি ৭৮ লাখ ৬০ হাজার (১.৫২ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়, যা এই দশ মাসের মোট রপ্তানি আয়ের ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
২০১১ সালে ভারত বাংলাদেশকে অস্ত্র ও মাদক বাদে সব পণ্যে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা দেয়। তবে সেই সুবিধা খুব বেশি কাজে লাগাতে পারছিলেন না বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা।
ওই বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশের বেশ কিছু কারখানার কাছ থেকে পোশাক নিয়ে টাকা দেয়নি ভারতীয় কোম্পানি লিলিপুট। সে জন্য বেশ কয়েক বছর পোশাক রপ্তানিতেও ভাটা পড়েছিল।
এরপর ভারতে রপ্তানি ধীরে ধীরে বাড়ছিল। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে প্রথমবারের মতো দেশটিতে পণ্য রপ্তানি আয় ১০০ কোটি বা ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। পাঁচ বছরের মাথায় ২০২২-২৩ অর্থ বছরে সেই আয় দ্বিগুণের বেশি বেড়ে ২ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলারে ওঠে।
২০২০-২১ অর্থ বছরে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা ভারতের বাজারে ১২৮ কোটি (১.২৮ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেন। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে রপ্তানির অঙ্ক ছিল ১২৫ কোটি (১.২৫ বিলিয়ন) ডলার। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে তা কমে ১০৯ কোটি ৬২ লাখ (১.০৯ বিলিয়ন) ডলারে নেমে আসে।
বাংলাদেশ ভারতে মূলত তৈরি পোশাক রপ্তানি করে থাকে। এছাড়া কাঁচা পাট ও পাটজাতপণ্য, সুতা, প্লাস্টিক পণ্য এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে ভারতে তৈরি পোশাক থেকে আয় হয়েছে ৫৬ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। এর মধ্যে ওভেন পোশাক থেকে আয় হয়েছে ৩৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার। আর নিট পোশাক থেকে আয় হয়েছে ১৯ কোটি ৮ লাখ ডলার।
এছাড়া পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে ১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে ৯ কোটি ১৪ লাখ ডলার, কটন ও কটন প্রোডাক্টস থেকে ২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার এবং প্লাস্টিক দ্রব্য রপ্তানি থেকে ৫ কোটি ৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার আয় হয়েছে।
মন্তব্য